করোনায় আর্থিক সংকটে যৌন ব্যবসায় জড়াচ্ছে তরুণীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২১, ১৫:১৭

করোনাভাইরাস মহামারির ফলে ব্রিটেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই বার ও দোকানপাট বন্ধ। ফলে আর্থিক সংকটে পড়েছে এসব স্থানে কাজ করা বহু শিক্ষার্থী।
তাই বাধ্য হয়ে এসব শিক্ষার্থীর অনেকে অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পথ বেছে নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় এসব শিক্ষার্থীকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে দেহপসারিণীদের ইউনিয়ন ইংলিশ কালেকটিভ অব প্রস্টিটিউটস (ইসিপি)।
প্রতিষ্ঠানটি গত বছর তিন হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর ওপর একটি জরিপ চালায়। জরিপে দেখা যায়, শতকরা চার ভাগ শিক্ষার্থী যৌনতা বিক্রি করেছেন কোর্স ফি পরিশোধ করার জন্য। প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন বলেছেন, তারা এটা করছেন নগদ অর্থের প্রয়োজনে।
সংস্থাটি বলেছে, তাদের কাছে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া বহু তরুণী সাহায্য চেয়ে হেলপলাইন্সে যোগাযোগ করছেন। তারা অর্থের বিনিময়ে দেহব্যবসা করতে চান। সেই অর্থ দিয়ে এসব শিক্ষার্থী তাদের ফি পরিশোধ করতে চান।
ইসিপি বলেছে, এ বছর দেহ ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনকারী এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা এরই মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। লকডাউন দেয়ার ফলে অসংখ্য শিক্ষার্থী আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন। ফলে দেহ ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জনকারী যুবতী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটেনের একটি অনলাইন ট্যাবলয়েড পত্রিকা। এতে বলা হয়েছে, অনেক শিক্ষার্থী নিজের নগ্ন ছবি বিভিন্ন সাইটে বিক্রি করছে। কারণ বার ও দোকানপাটে তাদের জন্য কোনো কাজ নেই। তাই প্রতিদিন এভাবে অর্থ উপার্জন ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ চেয়ে প্রতিদিন আটজন তরুণী শিক্ষার্থী ওই ইসিপির কাছে ফোন করছেন। এক্ষেত্রে কোনো কোনো ইউনিভার্সিটি নির্দেশনা প্রকাশ করছে। তাতে বলা হয়েছে, কিভাবে নিরাপদে দেহ বিক্রি করতে হবে।
ইসিপির মুখপাত্র লরা ওয়াটসন বলেছেন, টিউশন ফি পরিশোধ করতে পতিতাবৃত্তিতে তরুণী শিক্ষার্থীদের যুক্ত হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের এই গ্রুপে যেসব তরুণী যুক্ত হয়েছেন তারা কমপক্ষে ৩০ হাজার পাউন্ড ঋণ পরিশোধ করতে এ পেশায় এসেছেন।
তিনি বলেন, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে অসংখ্য নারী তার চাহিদা মেটাতে যৌনকর্মকে বেছে নিতে শুরু করেছেন। বার ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এসব তরুণীর সামনে কোনো বিকল্প খোলা নেই। তাই তারা বেঁচে থাকার জন্য এসব কাজ করছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসিপি। তখন থেকেই তারা যৌনকর্মীদের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদে, তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
লরা ওয়াটসন বলেন, প্রথমবার লকডাউন দেয়ার পর গণহারে যুবতীরা অনলাইনের সাথে যুক্ত হন। এক্ষেত্রে অনেক তরুণী হয়রানির শিকারও হচ্ছেন। কোনো কোনো যুবতীর কন্টেন্ট চুরি করে তা আবার পোস্ট করেছে অন্যজন।
অন্যরা বলেছেন, ক্লায়েন্টরা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য পেয়ে যায় কোনো না কোনোভাবে। তারপর তারা সেটা অন্য ফোরামে পোস্ট করে। করোনা মহামারিকালে এমনই একটি ওয়েবসাইট ফুলেফেঁপে উঠেছে। সেখানে বাণিজ্য হয়েছে ৭২ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডের।
ওই সাইটটির প্রতিষ্ঠাতা এসেক্সের ব্যবসায়ী টিম স্টোকলি। ডিসেম্বর নাগাদ তার ওই সাইটে ১০ লক্ষাধিক যুবক-তরুণী তাদের প্রাইভেট ছবি পোস্ট করেছেন। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল এক লাখ ২০ হাজার। ফলে যে পরিমাণে এতে শিক্ষার্থী তরুণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।